মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

চারুকলার নতুন শিক্ষকদের প্রতি


চারুকলার নতুন শিক্ষকদের প্রতি

ফরহাদ উদ্দিন মাসুম

   

       আমি অনেক স্বপ্ন নিয়ে চারুকলায় ভর্তি হয়েছিলাম। প্রতিটি শিক্ষার্থীই আমার মতো স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়। একেকজনের স্বপ্নের রং একেকরকম। কিন্তু সবাই স্বপ্ন নিয়ে আসে শিল্পী হবে। দু একজন ব্যতিক্রম আছে। তাদের কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ ডিজাইনার, কেউ রাজনীতিবিদ ইত্যাদি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চারুকলায় ভর্তি হয়। যারা শুধুমাত্র শিল্পী হওয়ার বাসনা নিয়ে চারুকলায় ভর্তি হয় তাদের বেশীরভাগকে হতাশ হতে হয় বিভিন্ন কারনে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক, অসচেতনতা বিভিন্ন কারনে শিল্পী হওয়া আর হয়ে উঠেনা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যক্তি, সমাজ, এমনকি রাষ্ট্র। রাষ্ট্র যেখানে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিছনে এমনকি শৈল্পিক চর্চার পিছনে। যদিও আমরা বলি আরো অনেক প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা। কথাটি ঠিক কিন্তু এই গরিব দেশে কতইবা অর্থ দেওয়া যেতে পারে এই খাতে। যেখানে প্রচুর মানুষ মৌলিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম। এখনো দারিদ্রসীমার নীচে বাস করছে অনেক মানুষ। সেখানে শিল্প কখনো কখনো বিলাসিতা মনে হয়। তারপরও আমাদের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিছনে সরকার প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। আমরা যারা এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছি বা পড়েছি তারা অনেক ঋনী সেইসব মানুষদের প্রতি যাদের করের টাকায় আমরা পড়েছি। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ফসল ফলে সেইসব মানুষদের প্রতিও আমরা ঋনী। আমাদের অবকাঠামো এখনো গড়ে উঠেনি নির্ভার হয়ে শিল্পচর্চার জন্যে। তাই অনেকেই বিকল্প পেশা বেছে নেয়।  সত্যিকার অর্থে আমাদের এই রাষ্ট্রের ধারণক্ষমতা নেই অনেক শিল্পী বেড়ে উঠার জন্য।

      শিল্পী হতে হলে প্রথমে ভালো মানুষ হওয়াটা জরুরি। শিল্পী যদি দূষিত হয় তার শিল্পকর্মও দূষিত হয়। সেই শিল্পকর্ম তখন দেশ দশের কোনো কাজে আসেনা। তাই শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহযোগিতা করতে পারেন শিক্ষকরা। উপনৈবিশিক আমলে চারুশিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। এখন সেই সব কারন ফুরিয়েছে। তাই সময় এসেছে শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদান পদ্ধতি নিয়ে ভাবার। দু:খের বিষয় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সময়ের সিলেবাস এখনো বিদ্যমান অথচ সময় বদলেছে। পৃথিবীর মাটি যেমন বদলেছে বদলেছে তেমনি পৃথিবীর আকাশ। মানুষের মনের রং, রুচি চাহিদা সবকিছুতে পরিবর্তন এসেছে। দক্ষতার চেয়ে ধারনা এখন বেশী গুরুত্ব পায়। বিশ্বব্যাপী ভিডিও টিউটোরিয়ালের কারনে এখন ঘরে বসেই শিক্ষার্থীরা শিখতে পারছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন ? শিক্ষকের কাছে কি প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের ? কেন শিক্ষার্থী নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে ? তাদের কিভাবে শিক্ষাদান করতে হবে ? এইসব প্রশ্নের উত্তর শিক্ষককে বের করে সমাধান করতে হবে।

      

       আমি হতাশ হয়েছি আমাদের সময়ের শিক্ষকদের পেয়ে। আমি তাদের মতো হতে পারিনি, না তারা আমাদের মন মতো হতে পারেননি। প্রশ্নটি সময়ের কাছে রইলো। কিন্তু শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতি অনেক বেশী একঘেয়েমি পূর্ণ ছিল এই কথা আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারি। আমার যেখানে দূর্বলতা, যেখানে আমার মনোযোগ দেওয়া উচিত কিংবা আমার কোন দিক বজায় রাখা উচিত সবকিছুই কেমন ধোঁয়াশা ছিল। আমি শিক্ষকদের ভালো দিক গুলো গ্রহণ করতে পারিনি। ভালো কিংবা মন্দ দুটোর পার্থক্য কি আমার শিক্ষকরা ধরিয়ে দেননি। শিল্প কি ? জীবন কি ? কখনো শিক্ষকদের কাছে এর উত্তর পায়নি। তাই প্রতিনিয়ত জীবনের মানে খুঁজে ফিরছি। শিল্পের মানে খূঁজছি। হয়তো আজন্ম খুঁজে ফিরতে হবে। কারন আমার শিক্ষা যে অপরিপূর্ণ রয়ে আছে। তাই নতুন শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ শিক্ষার্থীদের তাদের নিজেদের পথ খুঁজে পেতে সহযোগিতা করুন। জয় হোক মানবতার, জয় হোক শিল্পের।