বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অন্যরকম ঈদ


অন্যরকম ঈদ
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
১৭/১২/২০০১
ফাহিম মহাকাশযানের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে জানতে পারলো আজ পৃথিবীতে ঈদ। সে জানালা দিয়ে বাইরের দিকটা দেখার চেষ্টা করছে। পৃথিবীর মতো কি সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ কি নতুন সাজে সজ্জিত ! তার খুব ইচ্ছে করছে কোনো একটা গ্রহে গিয়ে দেখে আসতে সেই গ্রহটি  কেমনভাবে ঈদ উদযাপন করছে। সেখানেও কি পৃথিবীর মানুষগুলোর মত ঈদ উদযাপন করছে। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঈদের নামায আদায় করে সবার সাথে কোলাকুলি করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। তারাও কি পৃথিবীর মানুষের মতো নতুন জামাকাপড় পড়ে বড়দের সালাম করছে, স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই মুহুর্তে তার খুব জানতে ইচ্ছে করছে অন্যান্য গ্রহের সবচেয়ে বুদ্বিমান প্রাণীরা কি জামাকাপড় পড়ে, পড়লে তাদের কাপড়ের ধরণটা কি রকম, তাদের ফ্যাশনটা কেমন। ফাহিম ভাবছে এবার সে অন্যান্যবারের মতো ঈদ উদযাপন হতে বঞ্চিত। কিন্তু তবুও সে আজ বেড়াতে বের হবে। মহাকাশযান হতে ছোট্ট একটা স্পেসযান নিয়ে সে বের হয়ে পড়লো কাছাকাছি কোনো গ্রহের সন্ধানে। সে মহাকাশযানের স্ক্রীনে দেখতে পেল কাছাকাছি একটা ধূসর রং এর গ্রহের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। সে সেদিকটা যাওয়া শুরু করলো। ধূসর রংয়ের অচেনা অজানা গ্রহে সে তার স্পেসযান থামাল। স্পেসযান হতে নেমে সে কিছুটা পথ অতিক্রম করলো। কিন্তু  তখনও সে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব পেলনা। কিছুদূর যাওয়ার পর সে লম্বা নাকওয়ালা অনেকটা হাতির শূড়ের মতো কিছু প্রাণী দেখতে পেল যাদের শরীরে কোনো বস্ত্র নেই। আশ্চর্য তাদের দেখতে কোনো প্রকার লজ্জা অনুভূত হচ্ছেনা। বস্ত্রবিহীন লম্বা নাকওয়ালা প্রাণীদের হাতের সাথে তাদের মস্তিষ্কে কয়েকটা নলের সংযোগ দেখা যাচ্ছে। নলগুলোর কোনোটাতে নীল তরল কোনোটাতে সবুজ তরল কোনোটাতে হলুদ তরল অতিবাহিত হচ্ছে। পুরো গ্রহটাকে ধূসর কুয়াশার মতো মনে হয়। শুধুমাত্র লম্বা নাকওয়ালা  প্রাণীগুলোর শরীরের কিছু অংশে রংয়ের ছোয়া পাওয়া যাচ্ছে। ফাহিম তার হাতে থাকা অত্যাধুনিক মোবাইল ফোনের মতো যন্ত্রটাতে কিছু তথ্য ইনপুট করলো। সে জানতে চাইলো গ্রহটাতে দেখার মতো কিছু আছে কিনা। যন্ত্রটার স্ক্রীনে কিছু ছবির মতো দাগ দেখা গেল। সামনে ডানে কোনো স্তম্ভের মতো কিছু আছে যন্ত্রটা তা প্রকাশ করলো। ফাহিম সেদিকে গেল। সেটি ছিল ধূসর গ্রহের অভ্যর্থনা কক্ষ। ফাহিম সেখানে গেলে প্রাণীগুলো তার দিকে তাকিয়ে রইল।ফাহিম বোঝার চেষ্টা করছে দৃষ্টিগুলোতে কিসের চিহৃ।ভয় নাকি কৌতুহল নাকি অচেনা অজানা প্রাণীর অস্তিত্ব দেখতে পেয়ে তারা পুলকিত হল। সেখানকার একটি প্রাণী তার দিকে এগিয়ে আসলো। ফাহিম তাদের ভাষা বুঝতে পারলোনা। তবুও তারা আকার ইঙ্গিতের মাধ্যমে ভাবের আদান প্রদান করছে। ফাহিম বুঝতে পারলো তারা তাকে দেখে স্বাগত জানাচ্ছে। প্রাণীগুলো তাকে নিয়ে একটি কক্ষে উপস্থিত হলো। সেখানে কিছু প্রাণী বসে ছিল। ফাহিম বুঝতে পারলো এটি তাদের গ্রহ পরিচালনাকারীর সদর দফতর। সেখানকার প্রধান এর সাথে পরিচিত হতেই প্রধান তাকে একটি পালক উপহার দিল। পালকটিতে অনেকগুলো রংয়ের ছোয়া রয়েছে। ফাহিম প্রতিটি জিনিসই বিস্মিত হচ্ছে। লম্বা নাকওয়ালা প্রধান নাকটি হেলিয়ে দুলিয়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। ফাহিমের একটা জিনিস খুব ভাল লেগেছে সে সেটা খুব নেড়েচেড়ে দেখছিল। ফাহিম ফিরে আসার সময় তাকে অনেকে বিদায় জানাতে এসেঝে। তারা তাকে অনেকগুলো জিনিস উপহার হিসেবে দিল। ফাহিমের যে জিনিসগুলো খুব পছন্দ হয়েছিল সেগুলোও এর মধ্যে ছিল। বিশেষ করে যে জিনিসটা সে নেড়েচেড়ে দেখেছিল সেটিও এর মধ্যে আছে। ফাহিম খুব অবাক হলো সাথে সাথে সে তার আনন্দ ধরে রাখতে পারছিলনা। ফাহিম প্রধানকে তার হাতঘড়িটি উপহার হিসেবে দিল। ঘড়িটি হতে পৃথিবীর সময় তার ছবি এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান দর্শন করা যায়। এই গ্রহের মানুষের কাছে সময় বিষয়টা পরিচিত ছিলনা। তারা খুব অবাক হলো সময় বিষয়টা জানতে পেরে। তাদের গ্রহে সময় বলে কিছু নেই। শুধু বেড়ে চলা। প্রধাণ সেটি পেয়ে খুব খুশি। অবশেষে ফাহিম সবার কাছ থেকে বিদায় নিল। সবাই নাককে আলতোভাবে দুলিয়ে বিদায় প্রকাশ করছিল। ফাহিম তার ছোট স্পেসযানে উঠার আগে সবাইকে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। এরপর ফাহিম আবার স্পেসযানে করে ছুটে চললো। ফাহিম তার এত বছরের জীবনের সবচেয়ে অন্যরকম ঈদ উদযাপন করলো এবার।

কোন মন্তব্য নেই: