শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

আমার শিল্পচিন্তার পটভূমি

আমার শিল্পচিন্তার পটভূমি
ছবি কেন আঁকি ?
ছবি কেন আঁকি ? এটা হয়তো এক কথায় বলা সম্ভব নয়। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে এটা উপলব্ধি করতে হয়। সব উপলব্ধি সব সময় সমানভাবে প্রকাশ করা যায়না। কিছু বোধের, কিছু উপলব্ধির, কিছু অনুভবের। অনুভবের স্তরকে হয়তো আলাদা করা যায়, ভাবকে হয়তো নয়। বিষয়গুলো অন্তরজগতে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে।
    আমরা সব সময় একটা দেশ (space) ও সময় (Time) - এ অবস্থান করি । আমাদের অন্তরজগতও তাই। সময় ও দেশের মধ্যে কখনো সখ্য কখনো বা দ্বন্দ¦ প্রতিয়মান হয়।
“আমি,
আমার মন
ঘুরছে সারাক্ষণ
আবেগ অনুভূতিতে নিত্যক্ষণ।”
মাঝে মাঝে বোধের একান্ত জগতে প্রবেশ করে কিছু বস্তু, কিছু কথা, কিছু স্বপ্ন আবার কিছু বাস্তবতা। দুপুরের আলসেমিতে কিংবা বিকেলের শুভ্র স্নিগ্ধ আলোয় আমরা চিন্তামগ্ন হই। আমরা আমাদের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি। শুধু ভবিষ্যতটা আমাদের নতুন করে ভাবায়না আমাদের অতীতটাও আমাদের নতুন করে ভাবায়। অতীতের দৃশ্যের সঙ্গে কিছু দৃশ্যকল্প যুক্ত হয়ে আমাদের মস্তিষ্কে প্রায়ই একধরনের সুখানুভূতি ঘটায়। আর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আমাদের কল্পনায় ডানা মেলে বহুদুর চলে যেতে পারি। আবেগ আমাদের দৃশ্যমান বিষয়ের সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্ক তৈরী করে দেয়। বস্তুর সঙ্গে বস্তুর সম্পর্ক, ব্যক্তির সঙ্গে বস্তুর সম্পর্ক কিংবা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক ইত্যাদি জায়গার ক্ষেত্রে আবেগ আমাদের প্ররোচিত করে। আবেগের তাড়নায় আমরা কখনো খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠি কখনো বা কেঁদে বুক ভাসাই।
    জীবনের পরতে পরতে প্রত্যেকটি মুহূর্ত আমাদের উপলব্ধিতে তরঙ্গ সৃষ্টি করে। আমরা শুধু বস্তুকে বস্তু নয় অন্য কোনভাবেও উপলব্ধি করতে পারি। এই উপলব্ধির বোধ থেকেই হয়তো নতুন কিছুর সৃষ্টি হয়। শিল্পের তাড়না হয়তো এভাবেই জন্ম নেয়। আমাদের উপলব্ধিতে আমরা নতুনের আহবান পাই, সুন্দরের সন্ধান পাই।
প্রকৃতিতে মেঘের মধ্যে প্রায়ই নানা আকার বা ফর্মের সৃষ্টি হয়। বস্তুত মেঘ নিজে নিজে আমাদের উপলব্ধিতে আকার বা ফর্মের সৃষ্টি করে না। তবে মেঘকে উপলক্ষ্য করে বহু ফর্ম আমাদের উপলব্ধিতে ধরা দেয়। কখনো ঘোড়া কখনো কোন মুখ কখনো কোন প্রাণীর অবয়ব। উপলব্ধিতে বিশাল ক্যানভাসে তখন অন্য এক চিত্রকল্প তৈরী হয় যা বাস্তবে নেই কেননা মেঘ মূলতঃ মেঘই। ঘোড়া, মুখ বা অণ্য কিছু নয়। আকাশ হাতছানি দেয় আমাদের অবিরত। আমাদের মনোলোকে বা অনুভূতিতে সবসময় যে এমনটি ঘটে তা নয়। কখনো ব্যস্ততায় এড়িয়ে যাই কখনো ডুবে যাই তার আহবানে।
জীবনানন্দের এই কবিতা আমাদের ভাবিত করে।
“অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতর
খেলা করে ; 
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত-ক্লান্ত করে ;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই ;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ’পরে।”
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়ের জন্য হয়তো মানুষের এই শিল্প সাধনা যা আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতর খেলা করে।



কোন মন্তব্য নেই: