শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

কোটা একটা ফাঁদ

ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
৪.১১.২০১৮
আমরা সবাই ক্রিকেটকে ভালবাসি। ক্রিকেট আমাদের অহংকার। ক্রিকেট আমাদের অলংকার। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ নানান সমস্যায় জর্জরিত- ক্ষুধা, দারিদ্রতা, অশিক্ষা, ধর্মীয় কুসংস্কার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, খুন, ধর্ষন, অপরাধ প্রবণতা, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি। এর মধ্যেও কিছু আশানিয়া বিষয় আছে যেমন- আমাদের গার্মেন্টস শিল্প, ঔষধ শিল্প, ক্রিকেট, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা, কিছু বৈজ্ঞানিক সাফল্য, নোবেল প্রাপ্তি, কিছু ব্যাক্তিগত সাফল্য, নারীদের এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। আমাদের রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের পাহাড়সম দুর্নীতি সত্ত্বেও দেশ এগিয়েছে। এর অনেক কারন রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের শ্রমশক্তি আমাদের অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা যদি আমাদের শ্রম শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারি তবে পৃথিবীর বুকে আমরা অন্যতম সুখী সমৃদ্ধ দেশ হতে পারি। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশ জিতে তখন অানন্দে লাফিয়ে উঠে। সব দু:খ কষ্ট ভুলে যায়। বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিৎকার করে উঠে। সারা বিশ্ব এখন আমাদের চিনে, কারন ত্রিকেটে আমরা এখন শক্তিশালী। পৃথিবীর যে কোন দলকে হারানোর ক্ষমতা আমরা রাখি। আমার বিশ্বাস খুব বেশি দিন নেই আমরা ত্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবো। স্টেডিয়াম জুড়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়বে। আমার সোনার ছেলেরা বিশ্বকাপ হাতে আনন্দে উদ্বেলিত হবে। আমাদের দর্শকরা আনন্দ মিছিল করবে। এবং আমদের অনেকেই তখন কাঁদবে, এই কান্না কষ্টের নয় অনেক খুশির। আমি এই কান্নায় সামিল হতে চাই। এখন সেই ক্রিকেট দলকে যদি আমরা ৫৬ % কোটার মধ্যে নিয়ে আসি তবে কেমন হবে? মুত্তিযোদ্ধা কোটা ৩০% মানে ৩.৩জন, প্রতিবন্ধী কোটা ১% মানে ০.১১ জন, আদিবাসি কোটা ৫ % মানে ০.৫৫ জন, নারী ও অন্যান্য কোটা ২০% মানে ২.২ জন। তখন আমরা কি পারবো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে ? আমাদের ভাবার সময় এসে গেছে আমরা কি দেশকে এগিয়ে নিব নাকি পিছিয়ে দিব? কোটা একটা ফাঁদ। এটা বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আমরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধারা কি সত্যিই এই সুবিধা পাচ্ছে নাকি তাদের নামে অন্যরা এই সুবিধা ভোগ করছে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সেটা কি কোটার জন্য ! বাংলাদেশের অনেক মানুষ যুদ্ধ করেছেন যাঁরা যুদ্ধ কি জিনিস জানতোনা। অস্ত্র চালাতে জানতোনা। শুধুমাত্র দেশকে ভালোবাসার জন্য, দেশের মুক্তির জন্য তাঁরা নিজের জীবন বাজি রেখেছেন। যিনি দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারেন উনি দেশ গঠনের জন্য তাঁর সন্তানকে প্রস্তুত করতে পারেন। তাঁর পরিবারকে প্রস্তুত করতে পারেন। তাঁর কোটার প্রয়োজন হবেনা। অন্তত আমি তাই বিশ্বাস করি। তাই কোটা নয় মেধাবীদের মূল্যায়ন করুন। এই মেধাবীরাই সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। আসুন কোটার ফাঁদ হতে দেশকে মুক্ত করি। কোটা নিয়ে আর দুর্নীতি নয়। কোটা নামের জুজুর কারনে মাস্টার্স পাশ মেধাবী ছাত্রের জন্য এস এস সি ফেল নেতার সুপারিশ লাগে। বাংলাদেশে একজন পিয়নের জন্য এখন এস এস সি পাশ নিয়োগ সার্কুলার দেওয়া হয়। আমার দেখা একজন মাস্টার্স পাশ ব্যাক্তি পিয়নের চাকরী করেছেন কারন সরকারী চাকরী করতে চান। কারন ৩০ বছর পর সরকারী চাকরী পাওয়া যায়না। পরবর্তীতে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের উন্নতি ঘটিয়েছেন বর্তমানে শিক্ষা বিভাগে কর্মরত। অন্তত এইটুকু বুঝতে পারলাম উনি মেধাবী। মেধাবী না হলে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের উন্নতি ঘটাতে পারতেননা। অথচ বাংলাদেশে সর্বোচ্চ পদে একজন ৮ম শ্রেণী পাশ নিয়োগ পায়। কারন কোটা। বাবা কোটা, স্বামী কোটা, নাতি কোটা, ভাই কোটা, বোন কোটা, নেতা কোটা, নেতার পতি কোটা, মামা কোটা, চাচা কোটা, পারাতো কোটা, সন্ত্রাসী কোটা, জেলা কোটা, এলাকা কোটা ইত্যাদি কোটায় জাতি জর্জরিত। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। প্রতিটি মানুষ মেধা বিকাশের সুযোগ পাক।

কোন মন্তব্য নেই: