শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

জীবন যেন কি! কিছু শব্দ নাকি কিছু বাক্য, নাকি কিছু সুর, কিছুই যেন ধরা দেয় না। জীবন তোমাকে খুঁজে ফিরি....
বাংলাদেশে এখনো অনেক মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে। এখনো মানুষ ফুটপাতে থাকে, রেল স্টেশনে থাকে, ওভার ব্রীজে থাকে, রাস্তায় থাকে, খোলা মাঠে থাকে, যেখানে একটু শরীর এলিয়ে দিয়ে যায়, সেখানে থাকে। রোদ-বৃ্ষ্টিতে মাথা গোজার ঠাঁই নাই। এখনো মানুষ ডাস্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খায়। এখনো অনেক মানুষ না খেয়ে রাত্রিযাপন করে কোনো রকম নিরাপত্তার কথা না ভেবেই। এখনো বিচার ব্যবস্থা চরম নাজুক। তবুও আমরা মনে করি আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে গেছি। হয়তো খুব দ্রুত উন্নত দেশের স্বীকৃতি পাবো। কিন্তু আসলে কি আমরা উন্নত হচ্ছি ? যতদিন দেশের সব মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ না হচ্ছে ততদিন এই উন্নয়নের কোনো মূল্য আছে ? হ্যা এটা ঠিক দেশের জিডিপি এগিয়েছে, দেশের রিজার্ভ বেড়েছে কিন্তু এই উন্নয়নের সুবিধা কারা ভোগ করছে ? শুধু উপরতলার মানুষ। দেশের শুধু অভিজাত শ্রেণীর উন্নয়ন মানে কি সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন? আমরা কি এই জন্য স্বাধীনতা চেয়েছিলাম ? আমরা প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস উদযাপন করি। কিন্ত আমরা কি মনে রেখেছি আমরা কেন স্বাধীনতা চেয়েছি ?
পৃথিবীতে মধুরতম শব্দগুলোর একটি নাম “বিপ্লব আসন্ন”। বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক হায়- বিপ্লব
কিছু দ্বার উন্মুক্ত হয়, কিছু বন্ধ হয়। বন্ধ আর খোলা এই প্রক্রিয়া যেন চলতেই থাকে। জীবন অনুভবে বন্ধ দ্বার আর খোলা দ্বার কড়া নাড়ে। বন্ধ আর খোলা দ্বারের মাঝখানের সময়ের নাম বুঝি জীবন.
বিষন্ন দিনের সবুজ পাত্ররা দূরে হারিয়ে যেতে থাকে, আমি হাত বাঁড়িয়ে ছুঁতে চাই। দূরে মিলিয়ে যেতে থাকে সবুজ পল্লব। দু:স্বপ্নের গাঢ় অন্ধকার নেমে আসে আকাশ থেকে। আমি মুহুর্তেই হারিয়ে যাই ব্ল্যাক হোলের অসীম সীমানায়। স্মৃতিরা আঁকড়ে ধরে মস্তিষ্কের ছোট্র নিউরনে।
বিষন্ন আকাশে রঙীন ধুলা জমা হয়। আমি হাত দিয়ে আলতো করে ধুলা সরায়। বাতাসে ছড়িয়ে যেতে থাকে রঙীন ধুলা। রঙীন ধুলাগুলো বিষাক্ত ঠিক যেন স্কারলেট লেক কিংবা বিষাক্ত প্রুশিয়ান ব্লু। আমি আনমনে তাকিয়ে থাকি অার ধুলাময় নি:শ্বাস নিই।
সময়টা খুব সম্ভবত ২০০৪ সাল কিংবা ২০০৫ সাল। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুরে ছাত্রদলের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। তখন বৈশাখ এর আয়োজন চলছে। আমাদের সুশীল সমাজ কোনো কর্পোরেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন নিতে রাজি নয়। কারন এতে চারুকলা তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজন ছোট হয়ে যায়। পুরো ক্রেডিট কর্পোরেট কোম্পানি নিয়ে নিবে। এবং গ্রাস করবে আমাদের সংস্কৃতিকে। যেমনটি আমরা দেখেছি চট্টগ্রামের বৈশাখী মেলা তথা জব্বারের বলি খেলা এর বেলায়। বাংলা লিংক গ্রাস করেছিল শত বছরের এতিহ্যকে।
যুগান্তর, গ্রামীন ফোন, বাংলালিংক চেষ্টা করছিল চারুকলা জুরে তাদের ব্র্যান্ডিং করতে। কিন্তু ছাত্র শিক্ষক কেউ রাজি নয়। দু একজন ছাত্রদলের কর্মী ছাড়া। কারন তারা ৫ লাখ টাকা বিজ্ঞাপন পেলে এর বড় একটি অংশ তাদের পেটে যেত। তা নিয়ে বেশ গোলমাল লেগে গেল। টাকার ভাগ তারা ছাড়তে রাজি নয়। এখন প্রশ্ন হলো বিজ্ঞাপন না নিলে কি হয় ? বৈশাখের র‌্যালি কিভারে হবে ? এত টাকা আসবে কোথা থেকে ? তবুও ছাত্ররা চ্যালেন্জ নিল। নিজেরা তাদের জল রং, সরা, মুখোশ তৈরি করে তা বিক্রি করে টাকা যোগারের চিন্তা করলো। কিছু লোভী ছাত্রদল কর্মী এবং কর্পোরেট কোম্পানি ছাত্রদের সাহসিকতায় পরাজিত হলো। শুরু হলো নিজেরাই নিজেদের অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা। এই প্রচেষ্টা দেশকে অনুপ্রানিত করে এই বিশ্বাস পোষন করি। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের নিজেদের অর্থসংস্থান করতে হবে। যতই কর্পোরেট জগত থেকে চাপ আসুকনা কেন।
এবার আসি মূল প্রসংগে- আমরা কি সেদিন এই মূল্যবোধ নিয়ে কর্পোরেট কিংবা ছাত্রদলকে রুখে দিয়েছিলাম যে অন্য কেউ যেন সহজে সেই জায়গা দখল করতে পারে। মোঘল, ব্রিটিশ, পাকিস্তান এভাবেই আমাদের ধোকা দিয়েছিল। আর আমরা বারবার প্রতারিত হয়েছিলাম।
এখন তবে কারা শোষন করছে ! ক্ষমতার পরিবর্তন হয় কিন্তু শোষনের অবসান হয়না !
চারুকলা অনুষদে এখন স্থায়ীভাবে স্থান পায় ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের ব্র্যান্ডিং। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও তারা তাদের হিংস্র থাবা থেকে রেহাই দিলনা।
যেখানে একদিনের জন্যও আমারা কর্পোরেটদের ব্যান্ডিং করতে দেয়নি, সেখানে কিভাবে স্থায়ীভাবে তারা ব্যান্ডিং করার সুযোগ পায় ! হুমায়ন আজাদ স্যারের কথায় বলতে চায়- “আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম”
চারুকলার ডিন স্যারের কাছে জানতে চায়- কত কোটি টাকার বিনিময়ে তারা স্থায়ীভাবে ব্যান্ডিং করার সুযোগ পেল ?
শিল্পীরা কি শুধু চাটুকার হবে ? একটু সচেতন হবেনা ! তবে কিসের বোধ !!!