মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

ভাবনা

ভাবনা
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
১/৩/২০০২
এমন যদি হতো রাতের আকাশ হয়ে যেত নীল
তবে আমি ফিরে যেতাম সেথায়
যেখানে বিস্তৃত প্রান্তর, সবুজ ঘাস
তুমি আসবে সেথায়।
অপেক্ষার প্রহর গুনবো আমি
সময়ের অবসানে আসবে তুমি
তারপর হাঁটবো মোরা সামনে এগিয়ে
করবো মাতাল পৃথিবী জাগিয়ে।

জীবন অনুভবে

জীবন অনুভবে
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম

বহুদিন পর একটা কবিতা লেখা হল
সেই কবিতায় কিছু বাক্য জড়িয়ে গেল
কবিতাও আজ সম্পূর্ণ আশ্রয় দিতে পারেনা
তবে-
শিল্পের কোন শাখায় মানুষ তার সম্পূর্ণতাকে আবিষ্কার করতে পেরেছে?
কখনো মনে হয় এইতো আমি
পরক্ষণেই আবার মিলিয়ে যাই।
খন্ডতাকে হয়তো ছোঁয়া যাই
কিন্তু অখন্ডকে কিছুতেই নয়
আমি আমরা প্রতিনিয়ত...
তবে কোথায়?
আজো চিরচেনা মাধ্যমের অচেনা ব্যবহার নিজেকে আপ্লুত করে।
তবে !
খুঁজে বেড়াই কখনো অবিরত,
সম্পূর্ণতাকে ছোঁয়ার অভিলাষে।
তুমিও  কি?
তবে চলো একসাথে
খুঁজে ফিরি জীবন।

রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

হারানোর কষ্ট

হারানোর কষ্ট
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
০৬/১২/২০১৪, আদাবর, ঢাকা

একটি কবিতা হারিয়ে গেল
মুহূর্তের অসাবধানতায় নাকি ভাগ্যের নির্মমতায়
তবু তোমাকে ভালবাসি..
হয়তো খুঁজে পাবো হাজারো ভীড়ে
নাকি সান্তনা-
হয়তো হারিয়ে গেলে মহাকালের গর্ভে,
হয়তো কিছুই হারায়না-
ফিরে ফিরে আসে নতুন রুপে
কিন্তু তোমাকে আর স্পর্শ করা যাবেনা,
তোমাকে আর দৃষ্টিগোচরে আনা হবেনা
শুধু নামটুকু বয়ে বেড়াব
ভালো থেকো কবিতা।

শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

আমার শিল্পচিন্তার পটভূমি

আমার শিল্পচিন্তার পটভূমি
ছবি কেন আঁকি ?
ছবি কেন আঁকি ? এটা হয়তো এক কথায় বলা সম্ভব নয়। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে এটা উপলব্ধি করতে হয়। সব উপলব্ধি সব সময় সমানভাবে প্রকাশ করা যায়না। কিছু বোধের, কিছু উপলব্ধির, কিছু অনুভবের। অনুভবের স্তরকে হয়তো আলাদা করা যায়, ভাবকে হয়তো নয়। বিষয়গুলো অন্তরজগতে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে।
    আমরা সব সময় একটা দেশ (space) ও সময় (Time) - এ অবস্থান করি । আমাদের অন্তরজগতও তাই। সময় ও দেশের মধ্যে কখনো সখ্য কখনো বা দ্বন্দ¦ প্রতিয়মান হয়।
“আমি,
আমার মন
ঘুরছে সারাক্ষণ
আবেগ অনুভূতিতে নিত্যক্ষণ।”
মাঝে মাঝে বোধের একান্ত জগতে প্রবেশ করে কিছু বস্তু, কিছু কথা, কিছু স্বপ্ন আবার কিছু বাস্তবতা। দুপুরের আলসেমিতে কিংবা বিকেলের শুভ্র স্নিগ্ধ আলোয় আমরা চিন্তামগ্ন হই। আমরা আমাদের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি। শুধু ভবিষ্যতটা আমাদের নতুন করে ভাবায়না আমাদের অতীতটাও আমাদের নতুন করে ভাবায়। অতীতের দৃশ্যের সঙ্গে কিছু দৃশ্যকল্প যুক্ত হয়ে আমাদের মস্তিষ্কে প্রায়ই একধরনের সুখানুভূতি ঘটায়। আর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আমাদের কল্পনায় ডানা মেলে বহুদুর চলে যেতে পারি। আবেগ আমাদের দৃশ্যমান বিষয়ের সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্ক তৈরী করে দেয়। বস্তুর সঙ্গে বস্তুর সম্পর্ক, ব্যক্তির সঙ্গে বস্তুর সম্পর্ক কিংবা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক ইত্যাদি জায়গার ক্ষেত্রে আবেগ আমাদের প্ররোচিত করে। আবেগের তাড়নায় আমরা কখনো খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠি কখনো বা কেঁদে বুক ভাসাই।
    জীবনের পরতে পরতে প্রত্যেকটি মুহূর্ত আমাদের উপলব্ধিতে তরঙ্গ সৃষ্টি করে। আমরা শুধু বস্তুকে বস্তু নয় অন্য কোনভাবেও উপলব্ধি করতে পারি। এই উপলব্ধির বোধ থেকেই হয়তো নতুন কিছুর সৃষ্টি হয়। শিল্পের তাড়না হয়তো এভাবেই জন্ম নেয়। আমাদের উপলব্ধিতে আমরা নতুনের আহবান পাই, সুন্দরের সন্ধান পাই।
প্রকৃতিতে মেঘের মধ্যে প্রায়ই নানা আকার বা ফর্মের সৃষ্টি হয়। বস্তুত মেঘ নিজে নিজে আমাদের উপলব্ধিতে আকার বা ফর্মের সৃষ্টি করে না। তবে মেঘকে উপলক্ষ্য করে বহু ফর্ম আমাদের উপলব্ধিতে ধরা দেয়। কখনো ঘোড়া কখনো কোন মুখ কখনো কোন প্রাণীর অবয়ব। উপলব্ধিতে বিশাল ক্যানভাসে তখন অন্য এক চিত্রকল্প তৈরী হয় যা বাস্তবে নেই কেননা মেঘ মূলতঃ মেঘই। ঘোড়া, মুখ বা অণ্য কিছু নয়। আকাশ হাতছানি দেয় আমাদের অবিরত। আমাদের মনোলোকে বা অনুভূতিতে সবসময় যে এমনটি ঘটে তা নয়। কখনো ব্যস্ততায় এড়িয়ে যাই কখনো ডুবে যাই তার আহবানে।
জীবনানন্দের এই কবিতা আমাদের ভাবিত করে।
“অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতর
খেলা করে ; 
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত-ক্লান্ত করে ;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই ;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ’পরে।”
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়ের জন্য হয়তো মানুষের এই শিল্প সাধনা যা আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতর খেলা করে।



বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

প্রিয়া


প্রিয়া
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
১/১২/২০১৪

শিউলি ফুল গন্ধ মেলতে শুরু করেছে
আমি খুঁজি প্রিয় ফুল
সাদা স্নিগ্ধ, মাঝে কমলা আভা
পায়নিকো খুঁজে-
যন্ত্রের ঝংকারে কিংবা সুরারোলিত কন্ঠে
কোথায় যেন কিছুর অনুপস্থিতি
কানে নয় হৃদয়ে বাজে,
আমি খুঁজি চারপাশের মানুষের ভীড়ে
প্রিয় শিউলি ফুল।

শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৪

ছবি কথা বলে

ছবি যেন কথা বলে
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
২১/১১/২০১৪

ছবি যেন কথা বলে,
প্রতিনিয়ত
দৃশ্যমান ছবি অথবা অদৃশ্যমান ছবি।
বুকের বামপাশটা চিনচিনে ব্যথা করে উঠে
ছবি কথা বলে
অথবা
অনেক কথা জাগ্রত করে,
যদি পোড়ানো যেত ছবি
তবে ছাইপাশগুলো কথা বলে উঠতো
উফৃ ছবি কথা বলে অথবা
খুব বেশি নীরব থাকে
আমার জমানো কথাগুলো আমাকেই গ্রাস করে
বেড়ে বেড়ে উঠে
শুধুই বেড়ে উঠে
ছবি কথা বলে।

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৪

পুনরাবৃত্তি

পুনরাবৃত্তি
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম

 ১২/১১/২০১৪

পুনরাবৃত্তি, পুনরাবৃত্তি, পুনরাবৃত্তি। বিষন্ন বাক্সের শেষ চাবিটা হারিয়ে গেছে। আলো আর বাতাস এসে মৃদু শিহরন জাগায়না আজ। শুধু মিথ্যে আশার স্বপ্নময় আভাস- হয়তো চাবিটি খুঁজে পাওয়া যাবে। নাগরিক কোলাহলে হাজারো বস্তু মানুষের ভীড়ে সব কিছু ভীষণমাত্রায় গতিশীল। আমি যেন ফ্রেমে বাধাঁ, সেলুলয়েডের পারফরেশনের মাঝে কিছু কালো ছায়া। অস্তিত্ব আছে কিন্তু দেখা যায়না। সময়ের ¯্রােতে হারিয়ে যাই। হয়তো কোনো ডিজিটাল যন্ত্রের চোখে কিংবা আধুনিকতার চোখে অনুভব করবে আমার অস্তিত্ব। দেখা যাবে আলোর ভীড়ে এক ভীষণ অন্ধকারকে। অথবা হারিয়ে যাবো মহাকালের গভের্, এক ছোট্ট বিন্দু কণা। কিংবা জন্ম নেবো নতুন কোনো প্রাণের অস্তিত্বে। হয়তো বেঁচে থাকবো নতুন কিছুর মাঝে। একি বেঁচে থাকা! নাকি মৃত্যু।

ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে ‘মৃত্যু কি’?

এভাবে যদি ফিরে আসা যেত!

তবে হয়তো শান্তি পেতাম কিংবা আরো অস্থির হয়ে উঠতাম।

জন্ম থেকে যার নাম শুনে আসা- তার সাথে দেখা হতো, আলাপ করা যেত। দেখতে ইচ্ছে করে তোমাকে এবং তাকে এবং তাকে। সবারই অস্তিত্ব আছে আমার কাছে কিন্তু আমি কাউকে দেখতে পাইনা। কেউ আমার অস্তিত্ব অনুভব করেনা।

চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে কেউ কি এসেছিল?

তোমার সাথে এবং তাহার সাথে আমার অনেক আলাপ জমে আছে। এসো আমরা অলোচনায় রত হই। দেখা না হোক অন্তত তরঙ্গের মাঝে আলাপ হোক।

আচ্ছা তুমি কি আমার ভাষা বুঝতে পারবে! কি ছেলেমানুষি না?

তোমারতো বোঝার কথা। তবু মনে হয়, হয়তো তুমি আমার কথা বুঝতে পারবেনা। কিংবা তোমার সময় নেই, প্রয়োজনও নেই। কিন্তু পিক্সেল- এরতো কিছু কথা থাকতে পারে। পিক্সেল এবং পিক্সেল। জীবনেরই হয়তো অন্যরুপ।

কি আশ্চর্য্য!

আমি হয়তো বিবর্তিত হই সময়ের সাথে সাথে। সময় হয়তো আমাকে ঠিকই খুঁজে নেবে। কিন্তু তখন আর আমি থাকবো না। কিন্তু বেঁচে থাকবে আমার অস্তিত্ব- আমার রাগ, ক্ষোভ, ভালবাসা, হতাশা, স্বপ্ন এবং দর্শন। সেগুলো হয়তো বিবর্তিত হয়ে জন্ম নেবে অথবা হারিয়ে যাবে। বেঁচে থাকুক, বিবর্তিত হোক কিংবা হারিয়ে যাক, কিছুতেই আমার কিছু এসে যাইনা। আমি আছি শুধু আমার বর্তমান নিয়ে। বর্তমান বেড়ে বেড়ে অতীতে পরিণত হয়। বর্তমান এক মুহূর্ত, ঠিক যেন শিশির কণা সূর্যের আলো এসে পড়লেই তার মৃত্যু।

তবুও হয়তো বর্তমান ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে। ক্ষতবিক্ষত করে তোলে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে।