মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

স্বপ্নময়

স্বপ্নময়
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
২০০২
রাতের আকাশ নক্ষত্রে ভরা
শীতল বাতাস মনহারা
গাছের পাতা নড়ে
রিমঝিম রিম ঝিম স্বরে।
নিদ্রাহীন চোখ তাকিয়ে থাকে
মনে মনে স্বপ্নের ছবি আঁকে,
এই স্বপ্ন মানুষের
এই স্বপ্ন জীবনের।
জীবনের শেষ বেলা
বুনে যাবো স্বপ্নের খেলা।

খুঁজছি কবিতা

খুঁজছি কবিতা
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
২০০৯
অর্থহীন প্রগলতায় ঘুরছি যত
ফিরছে মন
ভীষণ রকম,
কিসের আশায়।
জানিনা সেকি
আমার কি
আমিই বা কি?
তবুও
¯্রােতের টানে কূলের আশায় ভাসছি এখনো দিব্যি
দিবসের কোন ক্ষণে মিলবে দেখা
অন্য ভুবনে।
তুমিও  চলছো  আমিও ছুটছি
কোন তরীতে ভিড়বো মোরা কোন নদীতে জাল
তুমি আমি ভাসছি,
ভাসছি অনন্তকাল।
তোমার মাঝে খুঁজছি আমি,
খুঁজছি কবিতা।

জাগ্রত হও

জাগ্রত হও
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
২০০২
পৃথিবীর আলোয় জেগে উঠে মানুষ
সূর্যের  আলোয় জেগে উঠে গাছেরা
তবে কেন শিক্ষার আলোয় জেগে উঠবেনা
মানুষের বিবেক।
হে মানুষ জাগ্রত হও
এসো পৃথিবী গড়ি,
সুন্দর স্বপ্নের ন্যায়
যেখানে থাকবেনা কোনো বাঁধা-ভয়।

ভাবনা

ভাবনা
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
১/৩/২০০২
এমন যদি হতো রাতের আকাশ হয়ে যেত নীল
তবে আমি ফিরে যেতাম সেথায়
যেখানে বিস্তৃত প্রান্তর, সবুজ ঘাস
তুমি আসবে সেথায়।
অপেক্ষার প্রহর গুনবো আমি
সময়ের অবসানে আসবে তুমি
তারপর হাঁটবো মোরা সামনে এগিয়ে
করবো মাতাল পৃথিবী জাগিয়ে।

জীবন অনুভবে

জীবন অনুভবে
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম

বহুদিন পর একটা কবিতা লেখা হল
সেই কবিতায় কিছু বাক্য জড়িয়ে গেল
কবিতাও আজ সম্পূর্ণ আশ্রয় দিতে পারেনা
তবে-
শিল্পের কোন শাখায় মানুষ তার সম্পূর্ণতাকে আবিষ্কার করতে পেরেছে?
কখনো মনে হয় এইতো আমি
পরক্ষণেই আবার মিলিয়ে যাই।
খন্ডতাকে হয়তো ছোঁয়া যাই
কিন্তু অখন্ডকে কিছুতেই নয়
আমি আমরা প্রতিনিয়ত...
তবে কোথায়?
আজো চিরচেনা মাধ্যমের অচেনা ব্যবহার নিজেকে আপ্লুত করে।
তবে !
খুঁজে বেড়াই কখনো অবিরত,
সম্পূর্ণতাকে ছোঁয়ার অভিলাষে।
তুমিও  কি?
তবে চলো একসাথে
খুঁজে ফিরি জীবন।

রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

হারানোর কষ্ট

হারানোর কষ্ট
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
০৬/১২/২০১৪, আদাবর, ঢাকা

একটি কবিতা হারিয়ে গেল
মুহূর্তের অসাবধানতায় নাকি ভাগ্যের নির্মমতায়
তবু তোমাকে ভালবাসি..
হয়তো খুঁজে পাবো হাজারো ভীড়ে
নাকি সান্তনা-
হয়তো হারিয়ে গেলে মহাকালের গর্ভে,
হয়তো কিছুই হারায়না-
ফিরে ফিরে আসে নতুন রুপে
কিন্তু তোমাকে আর স্পর্শ করা যাবেনা,
তোমাকে আর দৃষ্টিগোচরে আনা হবেনা
শুধু নামটুকু বয়ে বেড়াব
ভালো থেকো কবিতা।

শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

আমার শিল্পচিন্তার পটভূমি

আমার শিল্পচিন্তার পটভূমি
ছবি কেন আঁকি ?
ছবি কেন আঁকি ? এটা হয়তো এক কথায় বলা সম্ভব নয়। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে এটা উপলব্ধি করতে হয়। সব উপলব্ধি সব সময় সমানভাবে প্রকাশ করা যায়না। কিছু বোধের, কিছু উপলব্ধির, কিছু অনুভবের। অনুভবের স্তরকে হয়তো আলাদা করা যায়, ভাবকে হয়তো নয়। বিষয়গুলো অন্তরজগতে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে।
    আমরা সব সময় একটা দেশ (space) ও সময় (Time) - এ অবস্থান করি । আমাদের অন্তরজগতও তাই। সময় ও দেশের মধ্যে কখনো সখ্য কখনো বা দ্বন্দ¦ প্রতিয়মান হয়।
“আমি,
আমার মন
ঘুরছে সারাক্ষণ
আবেগ অনুভূতিতে নিত্যক্ষণ।”
মাঝে মাঝে বোধের একান্ত জগতে প্রবেশ করে কিছু বস্তু, কিছু কথা, কিছু স্বপ্ন আবার কিছু বাস্তবতা। দুপুরের আলসেমিতে কিংবা বিকেলের শুভ্র স্নিগ্ধ আলোয় আমরা চিন্তামগ্ন হই। আমরা আমাদের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি। শুধু ভবিষ্যতটা আমাদের নতুন করে ভাবায়না আমাদের অতীতটাও আমাদের নতুন করে ভাবায়। অতীতের দৃশ্যের সঙ্গে কিছু দৃশ্যকল্প যুক্ত হয়ে আমাদের মস্তিষ্কে প্রায়ই একধরনের সুখানুভূতি ঘটায়। আর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আমাদের কল্পনায় ডানা মেলে বহুদুর চলে যেতে পারি। আবেগ আমাদের দৃশ্যমান বিষয়ের সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্ক তৈরী করে দেয়। বস্তুর সঙ্গে বস্তুর সম্পর্ক, ব্যক্তির সঙ্গে বস্তুর সম্পর্ক কিংবা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক ইত্যাদি জায়গার ক্ষেত্রে আবেগ আমাদের প্ররোচিত করে। আবেগের তাড়নায় আমরা কখনো খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠি কখনো বা কেঁদে বুক ভাসাই।
    জীবনের পরতে পরতে প্রত্যেকটি মুহূর্ত আমাদের উপলব্ধিতে তরঙ্গ সৃষ্টি করে। আমরা শুধু বস্তুকে বস্তু নয় অন্য কোনভাবেও উপলব্ধি করতে পারি। এই উপলব্ধির বোধ থেকেই হয়তো নতুন কিছুর সৃষ্টি হয়। শিল্পের তাড়না হয়তো এভাবেই জন্ম নেয়। আমাদের উপলব্ধিতে আমরা নতুনের আহবান পাই, সুন্দরের সন্ধান পাই।
প্রকৃতিতে মেঘের মধ্যে প্রায়ই নানা আকার বা ফর্মের সৃষ্টি হয়। বস্তুত মেঘ নিজে নিজে আমাদের উপলব্ধিতে আকার বা ফর্মের সৃষ্টি করে না। তবে মেঘকে উপলক্ষ্য করে বহু ফর্ম আমাদের উপলব্ধিতে ধরা দেয়। কখনো ঘোড়া কখনো কোন মুখ কখনো কোন প্রাণীর অবয়ব। উপলব্ধিতে বিশাল ক্যানভাসে তখন অন্য এক চিত্রকল্প তৈরী হয় যা বাস্তবে নেই কেননা মেঘ মূলতঃ মেঘই। ঘোড়া, মুখ বা অণ্য কিছু নয়। আকাশ হাতছানি দেয় আমাদের অবিরত। আমাদের মনোলোকে বা অনুভূতিতে সবসময় যে এমনটি ঘটে তা নয়। কখনো ব্যস্ততায় এড়িয়ে যাই কখনো ডুবে যাই তার আহবানে।
জীবনানন্দের এই কবিতা আমাদের ভাবিত করে।
“অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতর
খেলা করে ; 
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত-ক্লান্ত করে ;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই ;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ’পরে।”
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়ের জন্য হয়তো মানুষের এই শিল্প সাধনা যা আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতর খেলা করে।