মঙ্গলবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৫

ঈশ্বরের আলো

ঈশ্বরের আলো
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
২৫/১২/২০০৭

আজ বড়দিন
খৃষ্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন
ঝিনুক বাতির আলোকছটায় রাঙানো গীর্জার চারপাশ
রোদ এসে ঠিকরে পড়ছে
বাতাসে দোল খেয়ে ঝিনুক বাতিগুলো চিকচিক করে উঠে।
স্বয়ং ঈশ্বর যেন আজ নেমে আসবেন মর্ত্যে
ঐ গীর্জার চূড়া দিয়ে তিনি নামবেন
এক অপার্থিব আলোয় আলোকিত হবে চারপাশ।
আলোর ধর্ম মতে তার প্রথম কাজ আলোকিত করা
আর অন্ধকারকে দূরীভিত করা
ঈশ্বর নেমেই পৃথিবীকে শুধু আলোকিত করবেননা
রাঙিয়ে তুলবেন সবকিছু শান্তির পরশে
পবিত্রতায় ভরে উঠবে আজকের পৃথিবী।
পামগাছগুলো যেন ঝিনুক বাতির আনন্দে আনন্দিত
তার লতাগুল্মগুলো নেমে আসছে নীচের দিকে
যেন অন্যরকম এক ঝিনুক বাতি।
ঘুলঘুলির ছোট্ট আলোয়
দেয়ালটায় বৈচিত্র্য আনছে
মনে হয় যেন সুন্দর টেক্সচার,
সবকিছু সুন্দরে রুপান্তরিত হোক।

ছেলেবেলা

ছেলেবেলা
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
২৪/১২/২০০৭


প্লাটফরমের ওপাশটায় হেঁটে চলেছি
বহুদিন হাঁটা হয়না এ পাশে
সেই যখন স্কুলে পড়ি
কতদিন হেঁটে বাসায় ফিরতাম
প্লাটফরমে এসে বাতাসের গন্ধ নিতাম,
কখনোবা বাসে ফিরতাম
ওভারব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে
দূরপানে চেয়ে থাকতাম
হেঁটে যখন ফিরতাম তখন তৃপ্তির মায়ায় জড়িয়ে পড়তাম
দু এক টাকা, পাঁচ টাকা ইত্যাদি করে জমিয়ে রাখতাম
তৃপ্তিকে পাওয়ার জন্য
এখন তৃপ্তি নেই তার জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে নতুন কেউ
কিন্তু সেই তৃপ্তিটুকু কি আর আছে
আমার ছেলেবেলার তৃপ্তি
এখনো খুঁজে ফিরি।

সোমবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৫

টিকেটের জন্য অপেক্ষা

টিকেটের জন্য অপেক্ষা
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
২৪/ ১২/ ২০০৭
টিকেটের জন্য অপেক্ষায় বসে আছি
কখন আসবে টিকেট
সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা পেরিয়ে গেল
তবু টিকেট আসছেনা
আমি ঠিক ডুবে যেতে বসেছি কবিতার মাঝে
অনেকক্ষণ অপেক্ষা,
কিছু কবিতার এলোমেলো রেখা
হঠাৎ মাঝবয়সী একজন এসে বললেন
ঠিক বললেননা যেন বুঝতে পেরেছিলেন
আমিই টিকেটের জন্য অপেক্ষায় বসে আছি
হাত বাড়িয়ে দিলেন
টিকেট হাতে পেয়ে দেখলাম এখনো অনেক সময় বাকী
ঠিক গুছিয়ে নেবার।
এমনি করে যদি পৃথিবী হতে গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার টিকেট পেতাম
কেউ এসে আমায় বলতো এই নাও
স্রষ্টার কাছে যাওয়ার টিকেট
তোমার হাতে অনেক সময়
গুছিয়ে তৈরী হয়ে নাও।
আমি আমার হাতের সবখানি কাজ গুছিয়ে নিতাম
সকলের কাছে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে বলতাম-
তোমরা সকলেই ভালো থেকো।

স্বপ্নডানা

স্বপ্নডানা
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
২৪/১২/২০০৭

কবিতারা সব ঘুরে বেড়ায়
আকাশের প্রান্তে
হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চায়।
মন বলে  মিস্টি রোদ,
শিশির কণা হারায়,
আমি বলি ভালবাসা
বেচেঁ উঠি তার ছায়ায়
তবুও-
কিছুতে কিছু হয়না
ভালবাসাও পূর্ণতা পায়না
দূর থেকে তাকিয়ে দেখি
কালো কাক, রোদের মায়ায়
সাদা আলোর ঝিলিক দিয়ে যায়।
আমি সুন্দর রোদ উপভোগ করি
বাতাসে মৃদু দোল দিয়ে যায়,
পাখিরাও ডানা ঝাপটিয়ে হেসে বেড়াই
আমি শুধু-
ডানা হোক স্বপ্ন
ভেসে বেড়াই।

রবিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৫

মোটেল এবং আমি

মোটেল এবং আমি
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
২৪/১২/২০০৭

মোটেলের শূণ্য পরিসরে তাকিয়ে থাকা
নতুন ভবনের অপেক্ষায় শূণ্য পরিসর
কলাগাছের পাতারা মৃদু দোলে
নৈ:শব্দ ছাপিয়ে কখনো কখনো
পাখিরা ডেকে উঠে।
মাঝেমাঝে রিকশার টুং টাং শব্দ
যাত্রীকে নিয়ে সময়ের পথে চলা
আমি অপেক্ষায় থাকি ছোট্ট একটি টিকেটের জন্য
চলার জন্য অপেক্ষা যেন আমাদের সারাটা জীবন।

আমি

আমি
ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
৩১/০৭/২০০৮

এই জীবনে মন যে কতবার আকুপাকু করলো
কেউ জানেনা
কখন কিভাবে
ঠিক আমিও না
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যেন আমি নই যেন অন্য কোথাও
অজানা কোনখানে
বাস করছি সন্তর্পনে,
আমার দেহের মত আমার মন
যাকে ভাবি- আমি, আমার সত্ত্বা
অথচ
সেই আমিও যেন নিয়ন্ত্রিত কোন বস্তু
অদৃশ্য আলোকে শূণ্য এক
হায়!

বুধবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৫

৭১ দেখেনি কিন্তু কেন যেন অনুভব করছি

৭১ দেখেনি কিন্তু কেন যেন অনুভব করছি
ফরহাদ ইদ্দিন মাসুম

গত ৪/১/২০১৫ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসছিলাম। টিকেট পেতে যথারীতি বেগ পেতে হলো। টিভিতে স্ত্রল আসছে ঢাকার সাথে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ। আমার যাওয়া জরুরি। ৫ জানুয়ারির সমাবেশের কারনে সব কিছু থমকে দেওয়া হলো। যদি টানা অবরোধ কিংবা হরতাল দিয়ে দেয় আমি আটকা পড়ে যাবো। সুতরাং ট্রেন ভরসা। সোনার হরিণ ট্রেনের টিকেটের জন্য অপেক্ষা। আমার মত অনেকেই ট্রেনের টিকেটের জন্য ভিড় করলো। ট্রেনের টিকেট পাওয়া হলোনা। এক বন্ধুকে বারবার ফোন করছি বাস ছাড়বে কিনা জানানোর জন্য। সেও আমার মত অসহায় হয়ে পড়েছে আগেই টিকেট কিনেছে কিন্তু গাড়ি ছাড়বে কিনা বাস কাউন্টার জানাতে পারছেনা। অবশেষে বাস কাউন্টার জানালো গাড়ি ছাড়বে তবে রাত ৯ টায় যেখানে গাড়ি ছাড়ার কথা ১১ টার পর। ১২ টার পর গাড়ি ছাড়লে সকালে ঢাকায় প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়বে তাই আগেই বাস ছাড়ছে। তাই দেরি না করে বাসের টিকেটের জন্য গেলাম। সেখানেও ভিড় তবে টিকেট কেনার জন্য নয় ফেরত দেওয়ার জন্য। সবাই জিগ্যেস করছে ভাই গাড়ী ছাড়বে ?  কিছুটা স্বস্তি পেলাম গাড়ী ছাড়বে। বাসের টিকেট কিনলামনা কারন বুঝলাম বেশিরভাগ লোক টিকেট ফেরত দিতে চাইছে নিরাপত্তার ভয়ে। আমার আগে থেকে টিকেট কিনতে ভয় করে যদি গাড়ী ধরতে না পারি। চলে যাচ্ছিলাম তারপর একটু ভয় পেলাম যদি গাড়ী কমিয়ে ফেলে। তাহলেতো টিকেট পাবনা। তাই বাসের টিকেট কিনে ফেললাম। পরিবারের সবাই আতংকিত এই পরিস্থিতিতে যাতায়াত করতে চাইছি। কিন্তু জীবনতো থেমে রাখা যায়না। কর্মক্ষেত্রে ফিরতেই হয়।

কাউন্টারে অনেক আগেই চলে আসলাম যদি গাড়ি আগে ছেড়ে দেয় সেই ভয়ে। আমার নির্দিষ্ট যাত্রার আগে যে বাস ছাড়ছে তার লোক আসেনি তাই আমাকে টিকেট পরিবর্তন করার কথা বললো। আগের গাড়িতে চলে যেতে বললো। কিছুটা সন্দিহান হয়ে পড়লাম। আমার মতো কিছু মানুষ তবু গাড়িতে উঠছে। বাস কন্ট্রাকটার বাসের জানালা বন্ধ করে দিল গন্ডগোলের আশংকায়। কেউ কেউ সম্মতি জানালো। আমার জানালা বন্ধ রাখতে অস্বস্তি হয় তবুও মেনে নিলাম। কেউ কেউ খোলা রাখছিলো গরম এবং দম বন্ধ করা পরিবেশের কারনে। কন্ট্রাকটার কঠিন হয়ে গেল ককটেল, পেট্রোল বোমা, ইট ইত্যাদির কারনে। জোর করে জানালা বন্ধ করে পর্দা টেনে দিল যেন কিছুর আঘাতে গ্লাস ভেঙ্গে সরাসরি গায়ে না পড়ে। সবাই বেশ আতংকিত। কন্ট্রাকটারের আচরনে আতংক আবারো ছড়িয়ে পড়লো। ৭১ দেখেনি কিন্তু কেন যেন অনুভব করছি। সেই সময় হানাদারদের ভয়ে মানুষ যাতায়াত করতে ভয় পেত। মুক্তিবাহিনী সন্দেহে সাধারন মানুষকে হত্যা করতো বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

তবে এখন হানাদার কারা ! এখন কিসের ভয় !

সময় বদলেছে সমাজ ব্যবস্থা বদলেছে কিন্তু সেই আতংক এখনো রয়ে গেছে। সাধারন মানুষ এখনো স্বাধীনভাবে যাতায়াত করছে পারছেনা। কেন এই ভয় ! স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে আমাকে কেন হরতাল, অবরোধ ইত্যাদির দোহাই দিয়ে আমার স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহকে থমকে দিবে ? তাদেরকে এই অধিকার কে দিয়েছে ? গনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে তারা যা খুশি তাই করছে। একদল গনতন্ত্র উদ্ধারের নাম করে সাফল্যের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে অন্যদল গনতন্ত্রের মৃত্যুবার্তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। একদল সমাবেশ করতে চাইছে অন্যদল সমাবেশ ভন্ডুল করতে চাইছে।

এতে সাধারন মানুষের কি লাভ হচ্ছে। তারা কোন সত্যিটা উপলব্ধি করছে। কিংবা তাদের কোন তথ্যটা দেওয়া হচ্ছে। সেটাকি সত্যি ? রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সুবিধামত গালভরা গল্প আমাদের জানাচ্ছে। আমাদের জীবন, সময়ের মূল্য তাদের কাছে নেই। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো আদৌ জানে “গনতন্ত্র কি” ?

রাজতন্ত্র, এককতন্ত্র, দলতন্ত্রের ভূত থেকে আমরা কবে রক্ষা পাবো ? কবে সত্যিকারের গনতন্ত্র আসবে ?