শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

সময়টা খুব সম্ভবত ২০০৪ সাল কিংবা ২০০৫ সাল। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুরে ছাত্রদলের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। তখন বৈশাখ এর আয়োজন চলছে। আমাদের সুশীল সমাজ কোনো কর্পোরেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন নিতে রাজি নয়। কারন এতে চারুকলা তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজন ছোট হয়ে যায়। পুরো ক্রেডিট কর্পোরেট কোম্পানি নিয়ে নিবে। এবং গ্রাস করবে আমাদের সংস্কৃতিকে। যেমনটি আমরা দেখেছি চট্টগ্রামের বৈশাখী মেলা তথা জব্বারের বলি খেলা এর বেলায়। বাংলা লিংক গ্রাস করেছিল শত বছরের এতিহ্যকে।
যুগান্তর, গ্রামীন ফোন, বাংলালিংক চেষ্টা করছিল চারুকলা জুরে তাদের ব্র্যান্ডিং করতে। কিন্তু ছাত্র শিক্ষক কেউ রাজি নয়। দু একজন ছাত্রদলের কর্মী ছাড়া। কারন তারা ৫ লাখ টাকা বিজ্ঞাপন পেলে এর বড় একটি অংশ তাদের পেটে যেত। তা নিয়ে বেশ গোলমাল লেগে গেল। টাকার ভাগ তারা ছাড়তে রাজি নয়। এখন প্রশ্ন হলো বিজ্ঞাপন না নিলে কি হয় ? বৈশাখের র‌্যালি কিভারে হবে ? এত টাকা আসবে কোথা থেকে ? তবুও ছাত্ররা চ্যালেন্জ নিল। নিজেরা তাদের জল রং, সরা, মুখোশ তৈরি করে তা বিক্রি করে টাকা যোগারের চিন্তা করলো। কিছু লোভী ছাত্রদল কর্মী এবং কর্পোরেট কোম্পানি ছাত্রদের সাহসিকতায় পরাজিত হলো। শুরু হলো নিজেরাই নিজেদের অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা। এই প্রচেষ্টা দেশকে অনুপ্রানিত করে এই বিশ্বাস পোষন করি। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের নিজেদের অর্থসংস্থান করতে হবে। যতই কর্পোরেট জগত থেকে চাপ আসুকনা কেন।
এবার আসি মূল প্রসংগে- আমরা কি সেদিন এই মূল্যবোধ নিয়ে কর্পোরেট কিংবা ছাত্রদলকে রুখে দিয়েছিলাম যে অন্য কেউ যেন সহজে সেই জায়গা দখল করতে পারে। মোঘল, ব্রিটিশ, পাকিস্তান এভাবেই আমাদের ধোকা দিয়েছিল। আর আমরা বারবার প্রতারিত হয়েছিলাম।
এখন তবে কারা শোষন করছে ! ক্ষমতার পরিবর্তন হয় কিন্তু শোষনের অবসান হয়না !
চারুকলা অনুষদে এখন স্থায়ীভাবে স্থান পায় ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের ব্র্যান্ডিং। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও তারা তাদের হিংস্র থাবা থেকে রেহাই দিলনা।
যেখানে একদিনের জন্যও আমারা কর্পোরেটদের ব্যান্ডিং করতে দেয়নি, সেখানে কিভাবে স্থায়ীভাবে তারা ব্যান্ডিং করার সুযোগ পায় ! হুমায়ন আজাদ স্যারের কথায় বলতে চায়- “আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম”
চারুকলার ডিন স্যারের কাছে জানতে চায়- কত কোটি টাকার বিনিময়ে তারা স্থায়ীভাবে ব্যান্ডিং করার সুযোগ পেল ?
শিল্পীরা কি শুধু চাটুকার হবে ? একটু সচেতন হবেনা ! তবে কিসের বোধ !!!

কোটা একটা ফাঁদ

ফরহাদ উদ্দিন মাসুম
৪.১১.২০১৮
আমরা সবাই ক্রিকেটকে ভালবাসি। ক্রিকেট আমাদের অহংকার। ক্রিকেট আমাদের অলংকার। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ নানান সমস্যায় জর্জরিত- ক্ষুধা, দারিদ্রতা, অশিক্ষা, ধর্মীয় কুসংস্কার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, খুন, ধর্ষন, অপরাধ প্রবণতা, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি। এর মধ্যেও কিছু আশানিয়া বিষয় আছে যেমন- আমাদের গার্মেন্টস শিল্প, ঔষধ শিল্প, ক্রিকেট, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা, কিছু বৈজ্ঞানিক সাফল্য, নোবেল প্রাপ্তি, কিছু ব্যাক্তিগত সাফল্য, নারীদের এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। আমাদের রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের পাহাড়সম দুর্নীতি সত্ত্বেও দেশ এগিয়েছে। এর অনেক কারন রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের শ্রমশক্তি আমাদের অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা যদি আমাদের শ্রম শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারি তবে পৃথিবীর বুকে আমরা অন্যতম সুখী সমৃদ্ধ দেশ হতে পারি। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশ জিতে তখন অানন্দে লাফিয়ে উঠে। সব দু:খ কষ্ট ভুলে যায়। বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিৎকার করে উঠে। সারা বিশ্ব এখন আমাদের চিনে, কারন ত্রিকেটে আমরা এখন শক্তিশালী। পৃথিবীর যে কোন দলকে হারানোর ক্ষমতা আমরা রাখি। আমার বিশ্বাস খুব বেশি দিন নেই আমরা ত্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবো। স্টেডিয়াম জুড়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়বে। আমার সোনার ছেলেরা বিশ্বকাপ হাতে আনন্দে উদ্বেলিত হবে। আমাদের দর্শকরা আনন্দ মিছিল করবে। এবং আমদের অনেকেই তখন কাঁদবে, এই কান্না কষ্টের নয় অনেক খুশির। আমি এই কান্নায় সামিল হতে চাই। এখন সেই ক্রিকেট দলকে যদি আমরা ৫৬ % কোটার মধ্যে নিয়ে আসি তবে কেমন হবে? মুত্তিযোদ্ধা কোটা ৩০% মানে ৩.৩জন, প্রতিবন্ধী কোটা ১% মানে ০.১১ জন, আদিবাসি কোটা ৫ % মানে ০.৫৫ জন, নারী ও অন্যান্য কোটা ২০% মানে ২.২ জন। তখন আমরা কি পারবো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে ? আমাদের ভাবার সময় এসে গেছে আমরা কি দেশকে এগিয়ে নিব নাকি পিছিয়ে দিব? কোটা একটা ফাঁদ। এটা বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আমরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধারা কি সত্যিই এই সুবিধা পাচ্ছে নাকি তাদের নামে অন্যরা এই সুবিধা ভোগ করছে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সেটা কি কোটার জন্য ! বাংলাদেশের অনেক মানুষ যুদ্ধ করেছেন যাঁরা যুদ্ধ কি জিনিস জানতোনা। অস্ত্র চালাতে জানতোনা। শুধুমাত্র দেশকে ভালোবাসার জন্য, দেশের মুক্তির জন্য তাঁরা নিজের জীবন বাজি রেখেছেন। যিনি দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারেন উনি দেশ গঠনের জন্য তাঁর সন্তানকে প্রস্তুত করতে পারেন। তাঁর পরিবারকে প্রস্তুত করতে পারেন। তাঁর কোটার প্রয়োজন হবেনা। অন্তত আমি তাই বিশ্বাস করি। তাই কোটা নয় মেধাবীদের মূল্যায়ন করুন। এই মেধাবীরাই সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। আসুন কোটার ফাঁদ হতে দেশকে মুক্ত করি। কোটা নিয়ে আর দুর্নীতি নয়। কোটা নামের জুজুর কারনে মাস্টার্স পাশ মেধাবী ছাত্রের জন্য এস এস সি ফেল নেতার সুপারিশ লাগে। বাংলাদেশে একজন পিয়নের জন্য এখন এস এস সি পাশ নিয়োগ সার্কুলার দেওয়া হয়। আমার দেখা একজন মাস্টার্স পাশ ব্যাক্তি পিয়নের চাকরী করেছেন কারন সরকারী চাকরী করতে চান। কারন ৩০ বছর পর সরকারী চাকরী পাওয়া যায়না। পরবর্তীতে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের উন্নতি ঘটিয়েছেন বর্তমানে শিক্ষা বিভাগে কর্মরত। অন্তত এইটুকু বুঝতে পারলাম উনি মেধাবী। মেধাবী না হলে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের উন্নতি ঘটাতে পারতেননা। অথচ বাংলাদেশে সর্বোচ্চ পদে একজন ৮ম শ্রেণী পাশ নিয়োগ পায়। কারন কোটা। বাবা কোটা, স্বামী কোটা, নাতি কোটা, ভাই কোটা, বোন কোটা, নেতা কোটা, নেতার পতি কোটা, মামা কোটা, চাচা কোটা, পারাতো কোটা, সন্ত্রাসী কোটা, জেলা কোটা, এলাকা কোটা ইত্যাদি কোটায় জাতি জর্জরিত। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। প্রতিটি মানুষ মেধা বিকাশের সুযোগ পাক।
একটা প্রশ্ন ঘুরছে মাথায় ১৯৭২ থেকে কোটা প্রথা চালু আছে তাহলে সিরাজ সিকদারকে কার নির্দেশে যেন ১৯৭৩ সালের জানুয়ারী মাসে রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিনা বিচারে হত্যা করেছিল ? তিনিতো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর কোটা তখন কোথায় ছিল? স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে মরতে হল কেন? সেই থেকে আমাদের বিচার বহির্ভূত হত্যা শুরু। যার পরবর্তী রূপ হলো র‍্যাব।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোশতাক তারপর খালেদ মোশারফ তারপর সিপাহী বিপ্লব। তারপর কার নির্দেশে যেন মিথ্যে আইনে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়েছিল। কেন? তখন কোটা কোথায় ছিল? তাঁর সন্তানেরা এখন কোটার সুবিধা কি পাচ্ছে ! এই হত্যাগুলোর বিচার হল না কেন? বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধার মুল রুপকার তাজ উদ্দিন আহমেদ এর হত্যার বিচার হল কি? তাঁকে
তো ইতিহাস ভুলতে বসেছে। কেন? তাঁর সন্তানেরা কোটার সুবিধা পাচ্ছে কি? স্বাধীন দেশে তিনি প্রায় নিগ্রিহ ছিলেন। কেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু বকরকে জানি কারা মেরেছিল ? এহসানকে জানি কারা মেরেছিল ? বিশ্বজিৎকে
জানি কারা মেরেছিল ? আর কত নির্লজ্জ হলে অমানুষ চেনা যায় !!!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঁধনকে জানি কারা প্রকাশ্য রাস্তায় শ্লীলতাহানি করেছিল ? জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কে জানি ধর্ষণের সেঞ্চুরি করেছিল ? আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এই পরিচয় দিলে যদি আমাকে আবু বকরের মা বলে - আমার ছেলেকে তোমরা কেন খুন করলে ? আমার ছেলের অপরাধ কি ছিল ?
আমি কি জবাব দিব ?
আমাকে যদি এহসানের মা বলে আমার ছেলেকে কেন তোমরা এভাবে পিঠালে ? আমার ছেলের চোখ কেন নষ্ট করলে ?
আমি কি জবাব দিব ?
বিশ্বজিৎ এর মা, ধর্ষিতার মা, আরো অনান্য মায়ের প্রশ্নের কি উত্তর দিব ? নাকি আমাকে সারা জীবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় গোপন করে বাঁচতে হবে ?

বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

২১ ফেব্রুয়ারি কি?

২১ ফেব্রুয়ারি কি?

ফরহাদ উদ্দিন মাসুম 
২১.০২.২০১৮

গতকাল ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমার সন্তান আমাকে জিজ্ঞেস করলো বাবা ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি?
আমি বললাম ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবস। বায়ান্নর এই দিনে আমরা আমাদের মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলাম। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার আরো নাম না জানা অনেকে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল ভাষার জন্য।
বাবা আজ কি বঙ্গবন্ধু এবারের সংগ্রাম স্বাধীণতার সংগ্রাম বলেছিলেন?
না বাবা। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ ভাষণ দিয়েছিলেন। সেটাতো ১৯৭১ সালে। আর ২১ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে। আমরা সেদিন রক্ত দিয়েছিলাম।
বাবা তাহলে আজকে ৭ই মার্চের ভাষন কেন বাজছে?
আজকে কি আমাদের মা বোনরা সম্ভ্রম হারিয়েছিল?
না বাবা। আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল।
বাবা তাহলে আওয়ামী লীগের ব্যানারে  কেন লেখা থাকলো হাজারো মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া ২১ শে ফেব্রুয়ারি।
আমার সন্তান বললো বাবা কেন ভাষার জন্য আমরা প্রাণ দিয়েছিলাম?
আমি বললাম শহীদের রক্তের বিনিময়ে আজকে আমরা আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলাতে কথা বলতে পারছি। বাবা এটা যেমন আমাদের জন্য শোকের তেমনি এখন এটি আমাদের জন্য গর্বেরও বিষয়। আমরা আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছি। তুমি আমাকে বাবা বলতে পারছো। পৃথিবীতে কত ভাষা হারিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলা ভাষা টিকে থাকবে অনন্তকাল। পৃথিবী আমাদের ত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মার্র্তভাষা দিবস ঘোষনা করেছে। এইজন্য আমরা ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
বাবা তাহলে আমি ইংরেজি স্কুলে পড়ি কেন? আর ইংরেজি না পারলে আমাকে শিক্ষক মারে কেন?
আমি বললাম বাবা বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা আর ইংরেজি হল আন্তর্জাতিক ভাষা। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিও জানা প্রয়োজন। নতুবা পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখবো কি করে? এই জন্য ইংরেজি শিখতে হয়।
আমার সন্তান বললো তাহলে ওরা বাংলা শিখেনা কেন?
আমি বললাম বাবা পৃথিবীর জ্ঞানের বেশিরভাগ বিষয়ই ইংরেজিতে লিখা। ইংরেজি জানলে পৃথিবীর সব জ্ঞান আহরণ করা যায়। তুমি যত বড় হবে তত দেখবে সব কঠিন কঠিন বিষয় বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্প, সভ্যতার সব বই ইংরেজিতে লিখা । ইংরেজি না জানলে চলবে কি করে?
আমার সন্তান বললো বাবা তাহলে আমাদের বড়রা কঠিন কঠিন বিষয় বাংলাতে লিখেনা কেন?
 আমি বললাম আমরা গরিব দেশ আমাদের গবেষণা করার জন্য যথেষ্ঠ অর্থ নেই। আমাদের কাছে জীবিকাই মূখ্য। এখানে জ্ঞানের কদর কম। দু বেলা ভাত জোগাড় করতেই আমাদের জীবন শেষ।
বাবা তাহলে বিদেশীরা আমাদের ব্যাংক লুট করে কেন?
তোমাকে কে বললো বিদেশীরা আমাদের ব্যাংক লুট করে?
আমি জানি বাবা- পত্রিকায় পড়েছি আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হয়ে গেছে। আমাদের রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে। আমাদের বেসিক ব্যাংক, সোনালি ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক সেখানেও জালিয়াতি ধরা পড়েছে। শেয়ার বাজারের টাকা উধাও হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর টাকা চুরি হয়ে গেছে। আরো অনেক অনেক চুরি হচ্ছে। কেন বাবা? আমরা কেন আমাদের ব্যাংকগুলোকে যতœ করে রাখতে পারিনা? তাহলেতো আর আমরা গরীব থাকতামনা। আর গবেষণা করার জন্য যথেষ্ঠ টাকা পাওয়া যেত।
আমি বললাম না বাবা এই সব আমাদের বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র, সব মিডিয়ার সৃষ্টি। আমরা এখন উন্নত দেশে পরিণত হচ্ছি। আমাদের জিডিপি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
বাবা তাহলে আমাদের স্কুলের পিয়নের ছেলে মেয়েরা কেন রাস্তায় থাকে। আমরা যদি উন্নত দেশ হই তবে আমাদের অনেককেই  না খেয়ে থাকতে হতনা।
আমি বললাম সব মিথ্যে। আমরা সবাই খুব ভালো ভাবে বেঁচে আছি। আমাদের কোন অভাব নেই।
বাবা মা তাহলে কেন আমাকে ভাত দিতে না পেরে কাঁদে। মা বলে চালের দাম নাকি অনেক বেশি আমাদের কেনার সামর্থ্য ফুরিয়ে আসছে। আমি মাংস খেতে চেয়েছিলাম মা আমাকে বকা দিয়ে বললো “আমাকে খা”। তোমার অফিস নাকি তোমাকে দেরি করে বেতন দেয়। মা তাই রান্না করতে পারেনা। বাবা তুমি জানো মা আমার স্কুলের বেতন দেওয়ার জন্য মায়ের অনেক জমানো টাকা ভেঙ্গে ফেলেছেন। বাড়িওয়ালা প্রতিদিন বাড়ি ভাড়ার জন্য আসে মাকে বকা দেয়।
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। জীবনে এই প্রথম এমন কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হলাম।
এসব সাময়িক। সব ঠিক হয়ে যাবে। দেশ এখন ডিজিটালে রুপান্তর হয়েছে। দেশে এখন ৪জি এসেছে।
বাবা ৪জি কি?
৪জি হল আরো শক্তিশালি। আরো দ্রুতগতির ইন্টারনেট আমরা ব্যবহার করতে পারবো।
বাবা তাহলে তোমাকে ফোন করলে কথা শুনতে পাইনা কেন? খালি নেটওয়ার্কে সমস্যা করে। গতকালকে আমি একটা ইংরেজি কবিতা শুনছিলাম ইন্টারনেটে। কিন্তু  ঠিকমত ইন্টারনেট পেলামনা।
বাবা আমাদের অনেক মানুষ। তাই আমাদের সমস্যাও অনেক।
কিন্তু বাবা আমাদেরতো অনেক হাত। সব হাত একসাথে থাকলেতো আমরা অনেক শক্তিশালি হতাম। মামা, চাচা সবাইতো বিদেশে গিয়ে কাজ করছে। বিদেশেতো কাজ করার লোক খুঁজে পায়না। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত কাজ করলেতো আমরা গরীব থাকতে পারি না।
(চলবে)